و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
তাওয়াসসুল তথা ওয়াসিলা গ্রহণ:
ইসলামের যে সকল বিষয় সূত্র পরম্পরায় আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং উম্মতের একটি বৃহৎ অংশ প্রত্যেক যুগে অবিচ্ছিন্নভাবে যে সকল আমলের ধারা চালু রেখেছে, সেগুলোর একটি হলো দু‘আতে ওয়াসিলা ধরা, বা মাধ্যম গ্রহণ করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। বিষয়টি কুরআন, হাদীস এবং সাহাবীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। মালেকী, হাম্বলী, শাফিঈ এবং মুতাআখখিরীন হানাফিয়্যাহগণ শরী‘আতের দৃষ্টিতে তাওয়াসসুল বা ওয়াসিলা ধরাকে বৈধ বলেছেন। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা ওয়াসিলা গ্রহণকারীর প্রশংসা করেছেন। (দেখুন! সূরা ইসরা: আয়াত ৫৭)
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ اِلٰی رَبِّہِمُ الۡوَسِیۡلَۃَ اَیُّہُمۡ اَقۡرَبُ وَ یَرۡجُوۡنَ رَحۡمَتَہٗ وَ یَخَافُوۡنَ عَذَابَہٗ ؕ اِنَّ عَذَابَ رَبِّکَ کَانَ مَحۡذُوۡرًا ﴿۵۷﴾
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ত্বাকি উছমানি হফিজাহুল্লাহ তাফসিরে উছমানিতে লেখেন
মুলকথা। উছিলা এবং ইবাদাতে পার্থক্য আছে উছিলা বৈধ শরিআত যে পরিমাণ অনুমতি প্রদান করে
(تنبیہ) توسل اور تعبد میں فرق ظاہر ہے۔ پھر توسل بھی اسی حد تک مشروع ہے جہاں تک شریعت نے اجازت دی۔
নিম্নে বিষয়টির দলীলভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো:
আভিধানিক অর্থে তাওয়াসসুল বা ওয়াসিলা: তাওয়াসসুল অর্থ তাকাররুব বা নৈকট্য লাভ, বলা হয় অমুক ব্যক্তি আ‘মলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেছে। কারো মাধ্যমে দু‘আ করানোকেও তাওয়াসসুল বা ওয়াসিলা বলে। সূরা মায়িদার ৩৫নং আয়াতে ওয়াসিলা শব্দটির ব্যবহার পাওয়া যায়।
سورہ المآئدۃ آیت نمبر 35
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ ابۡتَغُوۡۤا اِلَیۡہِ الۡوَسِیۡلَۃَ وَ جَاہِدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِہٖ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۳۵﴾
ترجمہ:
اے ایمان والو ڈرتے رہو اللہ سے اور ڈھونڈو اس تک وسیلہ ف ١٠ اور جہاد کرو اس کی راہ میں تاکہ تمہارا بھلا ہو. تفسير عثماني
(সূত্র: তাফসীরুল আলূসী: ৬/১২৪)
পারিভাষিক অর্থে ওয়াসিলা: আল্লাহর গুণবাচক নাম, বা কোনো নেক আমল, কিংবা আল্লাহর কোনো নেক বান্দাকে দু‘আর মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম বানানো, অর্থাৎ এভাবে দু‘আ করা যে, হে আল্লাহ! অমুক নেক আমল, বা অমুক নেক বান্দার ওয়াসিলায় আমার দু‘আ কবূল করুন। (সূত্র: তুহফাতুল ক্বারী: ৩/৩৩৭)
দু‘আর মধ্যে মাধ্যম/ওয়াসিলা ধরার চারটি পদ্ধতি মৌলিকভাবে পাওয়া যায়। যথা-
.1 التوسل باسماء الله تعالى و صفاته
‘আল্লাহর সত্তাগত নাম ও গুণবাচক নামের দ্বারা ওয়াসিলা ধরা’। অর্থাৎ, এভাবে দু‘আ করা যে, اسألك بكل اسم سميت به نفسك সকল ফুক্বাহা এ পদ্ধতিটিকে জায়েয বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলার অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকো (প্রার্থনা করো) ।’ (সূরা আ‘রাফ: ১৮০, আরও দেখুন! মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৪৬, হা. নং ৩৭১২)
.2التوسل بالإ يمان والأعمال الصالحة
‘দু‘আর মধ্যে ঈমান ও নেক আমলের ওয়াসিলা ধরা’। অর্থাৎ, এভাবে দু‘আ করা: ‘আমার অমুক নেক আমলের ওয়াসিলায় আমার দু‘আ কবূল করো’। তাওয়াসসুলের এ পদ্ধতি জায়েয হওয়ার ব্যাপারেও সকল উলামা ও ফুক্বাহা ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।
কোনো কোনো মুফাসসিরীনের মতে কুরআনের সূরা মায়িদা-৩৫ ও সূরা ইসরা-৫৭ নং আয়াতে ব্যবহৃত ওয়াসিলা শব্দটি উক্ত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
তিন ব্যক্তির পাহাড়ের গর্তে আটকে পড়ার ঘটনা-সম্বলিত হাদীসটিও নেক আমলের মাধ্যমে ওয়াসিলা ধরার একটি দলীল। বুখারীতে ইবনে উমর রা. থেকে হাদীসটি পাঁচ জায়গায় এবং মুসলিমে এক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে- হাদীস নং ٢٢١٥ :
2215 حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ ، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ ، قَالَ : أَخْبَرَنِيمُوسَى بْنُ عُقْبَةَ ، عَنْ نَافِعٍ ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " خَرَجَ ثَلَاثَةٌ يَمْشُونَ فَأَصَابَهُمُ الْمَطَرُ، فَدَخَلُوا فِي غَارٍ فِي جَبَلٍ، فَانْحَطَّتْ عَلَيْهِمْ صَخْرَةٌ ". قَالَ : " فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ : ادْعُوا اللَّهَ بِأَفْضَلِ عَمَلٍ عَمِلْتُمُوهُ. فَقَالَ أَحَدُهُمُ : اللَّهُمَّ إِنِّي كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ، فَكُنْتُ أَخْرُجُ فَأَرْعَى، ثُمَّ أَجِيءُ فَأَحْلُبُ، فَأَجِيءُ بِالْحِلَابِ فَآتِي بِهِ أَبَوَيَّ فَيَشْرَبَانِ، ثُمَّ أَسْقِي الصِّبْيَةَ وَأَهْلِي وَامْرَأَتِي، فَاحْتَبَسْتُ لَيْلَةً فَجِئْتُ فَإِذَا هُمَا نَائِمَانِ، قَالَ : فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُمَا وَالصِّبْيَةُيَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ رِجْلَيَّ، فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ دَأْبِيوَدَأْبَهُمَا حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا فُرْجَةً نَرَى مِنْهَا السَّمَاءَ ". قَالَ : " فَفُرِجَ عَنْهُمْ. وَقَالَ الْآخَرُ : اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي كُنْتُ أُحِبُّ امْرَأَةً مِنْ بَنَاتِ عَمِّي كَأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرَّجُلُ النِّسَاءَ، فَقَالَتْ : لَا تَنَالُ ذَلِكَ مِنْهَا حَتَّى تُعْطِيَهَا مِائَةَ دِينَارٍ. فَسَعَيْتُ فِيهَا حَتَّى جَمَعْتُهَا، فَلَمَّا قَعَدْتُ بَيْنَ رِجْلَيْهَا قَالَتِ : اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تَفُضَّ الْخَاتَمَ إِلَّا بِحَقِّهِ، فَقُمْتُ وَتَرَكْتُهَا، فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا فُرْجَةً ". قَالَ : " فَفَرَجَ عَنْهُمُ الثُّلُثَيْنِ. وَقَالَ الْآخَرُ : اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي اسْتَأْجَرْتُ أَجِيرًا بِفَرَقٍمِنْ ذُرَةٍ فَأَعْطَيْتُهُ وَأَبَى ذَاكَ أَنْ يَأْخُذَ، فَعَمَدْتُ إِلَى ذَلِكَ الْفَرَقِ فَزَرَعْتُهُ حَتَّى اشْتَرَيْتُ مِنْهُ بَقَرًا وَرَاعِيهَا، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ : يَا عَبْدَ اللَّهِ، أَعْطِنِي حَقِّي. فَقُلْتُ : انْطَلِقْ إِلَى تِلْكَ الْبَقَرِ وَرَاعِيهَا فَإِنَّهَا لَكَ. فَقَالَ : أَتَسْتَهْزِئُ بِي ؟ قَالَ : فَقُلْتُ : مَا أَسْتَهْزِئُ بِكَ، وَلَكِنَّهَا لَكَ. اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا. فَكُشِفَ عَنْهُمْ ".
২২৭২, ২৩৩৩, ২৪৬৫, ৫৯৭৪, মুসলিম: ২৭৪৩।
.3 التوسل بالنبى او الصلحاء فى الحيوة الدنيا.
‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়াসিলা ধরা, বা আল্লাহর নেক বান্দাদের জীবদ্দশায় তাদের ওয়াসিলা ধরা’।
‘তাদের মাধ্যমে দু‘আ করানো, বা তাদের ওয়াসিলায় দু‘আ করা’ উভয় সূরতই বৈধ হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। তাওয়াসসুলের এ পদ্ধতি তাওয়াতুর বা ‘প্রত্যেক নির্ভরযোগ্য সূত্রে ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত’ দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান ও মুহাব্বত এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি মুহাব্বতের ওয়াসিলা ধরে দু‘আ করাও উলামায়ে কিরামের নিকট জায়িয। অর্থাৎ, এভাবে দু‘আ করা: اسألك بنبيك محمد আর উদ্দেশ্য নেয়া اسألك بإيمانى به وبمحبته এক্ষেত্রে সলফেদের মধ্যে কোনো মতভেদ খুঁজে পাওয়া যায় না। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ.ও এ পদ্ধতিকে বৈধ বলেছেন। (দলীলের জন্য দেখুন, সূরা নিসা: ৬৪,
তিরমিযী: ৩৫৭৮,
বুখারী: ১০১০)
1010 حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَامُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْأَنْصَارِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنِي أَبِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُثَنَّى ، عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَنَسٍ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ : اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا. قَالَ : فَيُسْقَوْنَ.
.4 التوسل بالنبى ا والصلحاء بذاتهم بعد وفاتهم
‘ইন্তিকালের পর নবীদের অথবা নেক বান্দাদের সত্তার ওয়াসিলা গ্রহণ করা’। অর্থাৎ, এভাবে দু‘আ করা যে,
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِنَبِيِّكَ أَوْ بِجَاهِ نَبِيِّكَ أَوْ بِحَقِّ نَبِيِّكَ
এবং তাদের সত্তার ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা। তাওয়াসসুলের এ পদ্ধতির ব্যাপারে অধিকাংশ ফুক্বাহা, অর্থাৎ মালেকী, শাফিঈ, হাম্বলী এবং মুতাআখখিরীনে হানাফিয়্যাহগণের অভিমত হলো: এভাবে তাওয়াসসুল জায়িয, যেভাবে জীবিতাবস্থায়ও জায়িয। (সূত্র: শরহুল মাওয়াহিব: ১২/১৯৪, আল মাজমূ’: ৮/২৭৪, আল ফাতাওয়া আল হিন্দিয়া: ১/২৬৬, ফাতহুল ক্বাদীর: ৮/৪৯৮, ইবনে আবিদীন: ৬/৩৯৭)
শেষোক্ত তাওয়াসসুলের বিষয়ে যেহেতু সালাফী ও আহলে হাদীস ভাইয়েরা মতভেদ করে থাকে, তাই জমহুরে উলামায়ে কিরাম যে সকল যুক্তির ভিত্তিতে এটাকে জায়িয বলেন তা সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণের সাথে তুলে ধরা হলো:
.1 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ...
‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য ওয়াসিলা সন্ধান করো’। (সূরা মায়িদা: ৩৫)
বর্ণিত আয়াতে ওয়াসিলা দ্বারা التوسل بالذات والأعمال অর্থাৎ, সত্তা এবং আমল উভয়টির ওয়াসিলা উদ্দেশ্য। কারণ ‘ওয়াসিলা’ অর্থগতভাবে উভয়টাকে ধারণ করে। ফাতহুল বারীর বর্ণনা দ্বারাও একথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, وسيلة শব্দটি সত্তার মাধ্যমে ওয়াসিলা ধরে দু‘আ করাকেও বুঝায়।
আল্লামা ইবনে হাজার রহ. বুখারীর ১০১ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, অন্য বর্ণনাতে اللهم إنا كنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا. (হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়াসিলা ধরে দু‘আ করতাম। আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করতেন...)-এর সাথে اتخذوه وسيلة إلى الله. অংশটিও আছে। অর্থাৎ, আব্বাস রা.কে তোমরা আল্লাহর নৈকট্যের ওয়াসিলা বা মাধ্যম বানাও। সুতরাং উক্ত হাদীসের প্রথম অংশে وسيلة দু‘আ চাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হলেও اتخذوه وسيلة অংশে সত্তার ওয়াসিলা গ্রহণ করার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। উপরে বর্ণিত সূরা মায়িদার আয়াতের মধ্যেও ওয়াসিলা শব্দটি উভয় অর্থকে শামিল করেছে, যা উল্লিখিত ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। (সূত্র: ফাতহুল বারী: ৬/১১)
.2 وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا.
‘যদিও পূর্বে এরা কাফিরদের (অর্থাৎ পৌত্তলিকদের) বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলার কাছে বিজয় প্রার্থনা করতো’ (সূরা বাক্বারা: ৮৯)
এ আয়াতের তাফসীরে উলামায়ে কিরাম লিখেছেন, ইয়াহুদীদের কাছে যখন কোনো বিষয় কঠিন হয়ে দাঁড়াতো তখন তারা দু‘আ করতো:
اللَّهُمَّ انْصُرْنَا عَلَيْهِمْ بِالنَّبِيِّ الْمَبْعُوثِ فِي آخِرِ الزَّمَانِ الَّذِي نَجِدُ صِفَتَهُ فِي التَّوْرَاةِ
অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! শেষ যামানায় আগমনকারী নবীর ওয়াসিলায় আমাদেরকে সাহায্য করো, যার গুণাবলী আমরা তাওরাতে পেয়েছি।’ ফলে তাদের দু‘আ কবূল করা হতো। এখানে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে আসার পূর্বেই তার ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা হতো এবং তা কবূল হতো।
পবিত্র কুরআনে তাদের এ কর্মের সমালোচনা ছাড়াই উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং ‘এ আয়াত তাওয়াসসুলের স্পষ্ট দলীল’ বলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। (বুখারী হা. নং ১০১০)
اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا، الخ .৩
আরবী ব্যাকরণের দিক থেকে كنا শব্দটি একটি চলমান কাজকে বুঝায়। এ হাদীসে উল্লেখ আছে যে, উমর রা. বলেন: হে আল্লাহ! আমরা নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করতাম, আপনি কবূল করতেন.......। (বুখারী হা. নং ১০১০)
অতএব, আরবী ব্যাকরণের দিক থেকে হাদীসটি এ অর্থ প্রকাশ করছে যে, সাহাবায়ে কিরাম নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় এবং তার ইন্তিকালের পর তার ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করতেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর খলীফা ছিলেন আবূ বকর রা.। তারপর উমর রা.-এর খিলাফত পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা হতো- হাদীসটি দ্বারা একথাই বুঝাচ্ছে। ‘ওয়াসিলা ধরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশার সাথে সীমিত’-এমন কোনো কথা বর্র্ণিত হাদীসটিতে নেই। তবে আহলে হাদীস বন্ধুরা দাবী করে থাকে যে, “উক্ত হাদীসে আব্বাস রা.-এর ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা হয়েছে, কারণ তিনি জীবিত ছিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা হয়নি, যেহেতু তার ইন্তিকাল হয়ে গিয়েছিল”। কিন্তু একটু গভীর দৃষ্টি দিলে স্পষ্ট বুঝা যাবে যে, উক্ত বর্ণনায় সুক্ষ্মভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা হয়েছে। দু‘আর বাক্যটি ছিলো :
اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ بِعَمِّ نَبِيِّنَا ........ألخ
অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আমরা আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচার ওয়াসিলা দিয়ে প্রার্থনা করছি’। হাদীসের বাক্যটি দ্বারা ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ‘ক্বারাবাত’ বা আত্মীয়তা সম্পর্কের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা’ বুঝাচ্ছে। দু‘আর মধ্যে একথা বলা হয়নি যে, আব্বাস রা.-এর ওয়াসিলা দিয়ে প্রার্থনা করছি। বরং বলা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচার ওয়াসিলা দিয়ে প্রার্থনা করছি।
নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের আত্মীয়তা সম্পর্কের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করার অর্থই হলো নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা। সুতরাং এখানে ‘তার মৃত্যুর পর ওয়াসিলা দেয়া নিষেধ’-এমন কোনো প্রমাণ নেই। উপরন্তু ওয়াসিলা জায়িয হওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট হাদীস সামনে পেশ করা হচ্ছে:
حديث مالك الدار: قَالَ أَصَابَ النَّاسَ قَحْطٌ فِي زَمَنِ عُمَرَ فَجَاءَ رَجُلٌ إِلَى قَبْرِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اسْتَسْقِ لِأُمَّتِكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ هَلَكُوا...ألخ
أخرجه البيهقى و بطريقه أخرجه التقى السبكى فى شفاء السقاح وأخرجه البخارى فى تاريخه بطريق أبى صالح ذكوان، وأخرجه ابن خيثمة، أخرجه أيضا ابن أبى شيبة باسناد صحيح كما نص عليه ابن حجر
অর্থ: ‘মালেক আদ্দার রা. থেকে বর্ণিত, উমর বিন খাত্তাব রা.-এর খিলাফতকালে মুসলমানগণ বৃষ্টি খরার শিকার হয়েছিলো। একব্যক্তি নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কবরের নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলার কাছে উম্মতের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন, তারা-তো বৃষ্টি খরায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে...।’ (ফাতহুল বারী: ২/৬১১)
হাদীস বিশারদদের ইমাম ইবনে হাজার রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে তার ইন্তেকালের পর বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়েছে। প্রার্থনাকারী ছিলো বিলাল বিন হারেস। কোনো সাহাবী থেকে এ কাজের বিরোধিতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুতরাং তাওয়াসসুলের এ পদ্ধতিকে অস্বীকার করা কুরআন-হাদীস অস্বীকার করার নামান্তর। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের তাওয়াসসুলের শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর সাহাবায়ে কিরাম তাদের পরবর্তীদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তার তাওয়াসসুল গ্রহণের শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন:
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ حُنَيْفٍ، أَنَّ رَجُلاً ضَرِيرَ البَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي........ فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِيَ........أخرجه الترمذى-3578 وقال: هذا حديث حسن غريب.
أخرجه البخارى فى تاريخه ألكبير و ابن فى صلاة الحاجة والنسائى فى عمل اليوم والليلة، وأبو نعيم فى معرفة الصحابة والبيهقى فى دلائل النبوة و غيرهم على اختلاف يسير فى غير موضوع الاستشهاد, وصححه جماعة من الحفاظ يقارب عددهم خمسة عشر حافظا فمنهم سوى المتأخرين الترمذى وابن حبان والحاكم والطبرى وابونعيم والبيهقى والمنذرى.
অর্থ: ‘উসমান বিন হুনাইফ রা. থেকে বর্ণিত, চক্ষুরোগে আক্রান্ত একব্যক্তি নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে বললো, আমার সুস্থতার জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করুন... নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সুন্দরভাবে উযূ করতে বললেন এবং এ দু‘আটি পড়তে বললেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং রহমতের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়াসিলায় আপনার প্রতি ধাবিত হচ্ছি...’ (তিরমিযী হা.নং ৩৫৭৮)
বর্ণিত হাদীসে অনুপস্থিতির সম্বোধন/গায়েবানা সম্বোধনের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তার ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যা নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশার সাথে খাস না হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
হাদীসের বর্ণনাকারী ‘উসমান বিন হুনাইফ রা.ও উক্ত হাদীসের এই অর্থই বুঝেছেন যে, ওয়াসিলা ধরা নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশার সাথে খাস নয়। তার (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকালের পরও তার সত্তার ওয়াসিলা গ্রহণ করা যাবে। তাবারানী শরীফে আছে:
أَنَّ رَجُلًا كَانَ يَخْتَلِفُ إِلَى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي زَمَنِ خِلَافَتِهِ, حَاجَةٍ لَهُ , فَكَانَ لَا يَلْتَفِتُ إِلَيْهِ , وَلَا يَنْظُرُ فِي حَاجَتِهِ , فَشَكَا ذَلِكَ لِعُثْمَانَ بْنِ حَنِيفٍ, فَقَالَ لَهُ عُثْمَانُ بْنُ حُنَيْفٍ: " ائْتِ الْمِيضَأَةَ فَتَوَضَّأْ ... ثُمَّ قُلْ: اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَتَوَجَّهُ بِكَ إِلَى رَبِّي فَتَقْضِي لِي... فَقَالَ ابْنُ حُنَيْفٍ وَاللَّهِ , مَا كَلَّمْتُهُ وَلَكِنْ شَهِدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ الخ
اخرجه الطبرانى فى معجم الصغير:1/183, والبيهقى من طريقين واسنادهما صحيح, والهيثمى فى مجمع الزوائد واقره عليه كما اقر المنذرى قبله فى الترغيب.
অর্থ: ‘উসমান বিন আফফান রা.-এর খিলাফত-যুগে একব্যক্তি তার কাছে একটি প্রয়োজনে বার বার যাচ্ছিল। কিন্তু তিনি কোনো কারণবশতঃ তার দিকে ভ্র-ক্ষেপ করছিলেন না এবং তার প্রয়োজনও পুরা করছিলেন না। তাই সে ‘উসমান বিন হুনাইফ রা.-এর কাছে শিকাআত করলো। ‘উসমান বিন হুনাইফ রা. তাকে বললেন, ভালোভাবে উযূ করো, অতঃপর এই বলে দু‘আ করো: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং রহমতের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়াসিলায় আপনার দিকে ধাবিত হচ্ছি...’ (তাবারানী সগীর: ১/১৮৩)
প্রসিদ্ধ ও বিদগ্ধ আহলে হাদীস আলেম আল্লামা মুবারাকপুরী রহ. লিখেছেন: শায়েখ আব্দুল গনি ‘ইনজাহুল হাজাহ’ কিতাবে শায়েখ আবেদ সিন্ধির সূত্রে লিখেছেন যে, হাদীসুল আ’মা (অর্র্থাৎ, নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শিখানো ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করার হাদীসটি) নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তার মাধ্যমে তাওয়াসসুল জায়িয হওয়া বুঝায় এবং ‘উসমান বিন হুনাইফের তা’লীমের হাদীসটি নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর তার সত্তার তাওয়াসসুল জায়েয হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে।
আল্লামা শাওকানী তুহফাতুয যাকেরীনে বলেছেন, ‘উসমান বিন হুনাইফ রা.-এর তা’লীমের হাদীসটি নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তার মাধ্যমে তাওয়াসসুল জায়িয হওয়ার উপর দলীল। শর্ত হলো, এ বিশ্বাস রেখে দু‘আ করতে হবে যে, করনেওয়ালা যাত আল্লাহ তা‘আলা। (তুহফাতুল আহওয়াযী: ১০/২৭)
৬. স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পূর্ববর্তী নবীগণের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করেছেন, যারা দুনিয়া থেকে অনেক পূর্বেই ইন্তেকাল করে গেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
اغْفِرْ لِأُمِّي فَاطِمَةَ بِنْتِ أَسَدٍ، وَوَسِّعْ عَلَيْهَا مُدْخَلَهَا، بِحَقِّ نَبِيِّكَ وَالْأَنْبِيَاءِ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِي، فَإِنَّكَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ. اخرجه الطبرانى فى الكبيروالاوسط كما فىمجمع الزوائد للهيثمى:9/257
অর্থ: ‘আমার মা ফাতেমা বিনতে আসাদের মাগফেরাত করুন এবং আপনার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আমার পূর্বে গত নবীগণের ওয়াসিলায় তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন... (আল মু’জামুল কাবীর তবারানী: ২৪/৩৫৯, হা. নং ৮৭১; আল মু’জামুল আওসাত তবারানী: ১/৬৭, হা. নং ১৮৯)
৭. নবী আ. ও আম্বিয়া আ.-এর ইন্তেকালের পর তাদের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করার বিষয়টি পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা পাঠক সমাজের সামনে অন্যান্যদের ওয়াসিলায় দু‘আ করার একটি দলীল পেশ করছি:
وفى سنن ابن ماجه فى باب المشى إلى الصلاة عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ إِلَى الصَّلَاةِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِحَقِّ السَّائِلِينَ عَلَيْكَ ....قال الشيح زاهد الكوثرى:لاتنزل درجة الحديث مهما نزلت عن درجة الاحتجاج به بل يدور أمره بين الصحة والحسن لكثرة المتابعات والشوهد كماأشرنا إليها, وقد حسن هذا الحديث الحافظان العراقى فى تخريج الأحياء وابن حجر فى أمالى الأذكار.
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি নামাযের জন্য ঘর থেকে বের হয়; অতঃপর বলে, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আপনার কাছে প্রার্থনাকারীদের ওয়াসিলায়...’ (ইবনে মাজাহ্ হা. নং ৭৭৮)
বর্ণিত হাদীসটি সাধারণ এবং বিশেষ সব ধরনের লোকের ওয়াসিলা গ্রহণের বৈধতার প্রমাণ বহন করে।
বি.দ্র.: ইবনে তাইমিয়া রহ. মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়াতে তিন ধরনের তাওয়াসসুলের আলোচনা করেছেন। যথা-
التوسل بالإيمان به وبطاعته .১
‘নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান এবং তার আনুগত্যের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করা’।
التوسل بمعنى دعائه وشفاعته صلى الله عليه وسلم .২
‘তাওয়াসসুল অর্থাৎ, নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে দু‘আ এবং শাফা‘আত প্রার্থনা করা’। ইবনে তাইমিয়া রহ. এ দুই প্রকারের ব্যাপারে বলেছেন, উলামায়ে কিরামের ঐক্যমত্যে এ উভয় প্রকার জায়িয।
التوسل به بمعنى الاقسام على الله بذاته صلى الله عليه وسلم .৩
‘তাওয়াসসুল অর্থাৎ, নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তার কসম দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করা’ (মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া: ১/১০৬)
বিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলেছেন, আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. যে তাওয়াসসুলকে না-জায়িয বলেছেন সেটা হলো:
التوسل بمعنى الاقسام على الله بغير أسمائه
‘তাওয়াসসুল অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো নামে কসম দিয়ে দু‘আ করা’। আর এ প্রকারের তাওয়াসসুলকে আমরাও না-জায়িয বলি। কিন্তু তাওয়াসসুল যদি উক্ত পদ্ধতিতে না হয় তাহলে সেটা জায়িয হবে। (ফায়যুল বারী: ৩/১০৫)
উল্লেখ্য, কেউ যদি এ বিশ্বাস নিয়ে দু‘আ করে যে, ‘আমার মতো গুনাহগারের আল্লাহর কাছে সারাসরি চাওয়ার যোগ্যতা কোথায়? তাই আমি আল্লাহর নেক বান্দাদের কাছে চাই’; মাজারপূজারী, বিদ‘আতী ইত্যাদি সম্প্রদায় যেটা করে থাকে। তাওয়াসসুলের এ পদ্ধতি সম্পূর্ণ হারাম।
তদ্রুপ, কোনো বুযূর্গের কবরে গিয়ে তার কাছে অনুরোধ করা যে, ‘তিনি যেনো তার জন্য আল্লাহর কাছে তার কোনো প্রয়োজন পূরণের দু‘আ করেন’- তাওয়াসসুলের এ পদ্ধতিটিও না-জায়িয। (ইখতিলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম: পৃ. ৪৯-৬০)
(আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন: ফাতহুল বারী: ২/৬১০, তুহফাতুল ক্বারী: ৩/৩৩৭-৩৩৯, তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম: ৫/৩১৬-৩১৯, ফয়যুল বারী: ৩/১০৫, তুহফাতুল আহওয়াযী: ১০/২৫-৩১, মাকালাতুল কাওসারী: ৩৩৯-৩৫৬, মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ১৪/১৪৯-১৬৪)
যারা বলেন উছিলা হারাম বা শিরক তারা ভেবে দেখবেন।